০১. চিকিৎসার মেয়াদ কতদিন ?
   
  চিকিৎসার মেয়াদকাল কমপক্ষে ৪ মাস । বিভিন্ন গবেষনার ফলাফল ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসায় রিল্যাপ্স বা পুনঃ আসক্তির সংখ্যা অনেক বেশি ঘটে থাকে। বিধায় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনা করে আপস উপরোক্ত চিকিৎসার মেয়াদ নির্ধারণ করেছে।
   
০২. ভর্তির নিয়মাবলী কি কি ?
   
  যে কোন ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রের সকল ধরনের মাদক নির্ভরশীল পুরুষ এই কেন্দ্রে ভর্তি হতে পারে। তবে ভর্তি ইচ্ছুক ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের সেন্টারের নিয়ম-কানুন মেনে চলা ও মেয়াদকাল (৩ মাস ) উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিকে সেন্টারে রাখার সম্মতি থাকতে হবে। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ থেকে ৫০ বৎসর পর্যন্ত নেওয়া হয়।
   
০৩. কিভাবে চিকিৎসা করা হয় ?
   
  ভর্তি হবার পরে প্রথম ১৪ দিন মাদক প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ উপশমের জন্য চিকিৎসা দেয়া হয় যাকে নির্বিষকরন বা ডিটক্সিফিকেশন বলা হয়। রোগীর মাদক ব্যবহার সম্পর্কিত ইতিহাস জেনে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এসময় রোগীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিশ্রামের উপযোগী পরিবেশে রাখা হয়। এছাড়া জরুরী স্বাস্থ্য সেবার জন্য হাসপাতালে বা ক্লিনিকে পাঠানো হয়।
   
০৪. চিকিৎসার ব্যয় কত ?
   
  প্রতি মাসের চিকিৎসা ফি ১২,৫০০/- ৪ মাসের চিকিৎসা মেয়াদের জন্য । অন্যান্য খরচ যেমন-কাপড়-চোপড়, সাবান, পেষ্ট, ঔষধ-পত্র অথবা বিশেষ কোন চিকিৎসার জন্য(যেমন-মানসিক সমস্যা), ক্লিনিক বা হাসপাতালের খরচ অভিভাবককে বহন করতে হবে। ভর্তির সময় সাধারণত চলতি মাসের ফি অগ্রিম নেয়া হয়।
   
০৫. এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ?
   
  আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্রটি ১ তলা দালানবাড়ি ৮রুম বিশিষ্ট সামনে ও পেছনে খোলা জায়গা রয়েছে। মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। চারদিকে ৭ ফুট উঁচু দেয়াল রয়েছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও যেকোন জরুরী অবস্থার জন্য সার্বক্ষনিক পর্যাপ্ত লোকবল সেন্টারে রয়েছে।
   
০৬. মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগে বাড়িতে যাবার কোন সুযোগ আছে কিনা ?
   
  ৪ মাস পূর্ণ হবার পূর্বে রিলিজের কোন সুযোগ নেই। বিশেষ মানবিক বিষয় যেমন নিকট আত্মীয়র মৃত্যু বা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রেরন ইত্যাদি বিষয়ে ছাড় দেয়া হয়। যদি কেউ মেয়াদ পূর্ণ হবার আগেই চলে যেতে চায় তবে সেক্ষেত্রে ৪ মাসের সম্পূর্ণ টাকা ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) পরিশোধ করতে হবে।
   
০৭. মানসিক চিকিৎসার জন্য কি সেবা রয়েছে ?
   
  সব মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তিই মানসিক রুগী নয়৷ যাদের মাদক ব্যবহার করার ফলে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তারা এখানে ভর্তি হতে পারবে৷ এখানে একজন খন্ডকালীন মনো-চিকিৎসক রয়েছেন৷ তিনি প্রয়োজন অনুসারে মানসিক বা মনোচিকিৎসা দিয়ে থাকেন৷
   
০৮. পরিবারের সদস্যদের জন্য কোন কর্মসূচী রয়েছে ?
   
  প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় যে, অনেক মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তির পরিবারে ভাঙন, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ও সম্পর্কের জটিলতা রয়েছে৷ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য পারিবারিক সম্প্রীতি ও পরিবারের ভূমিকা রয়েছে৷ চিকিৎসা পরবর্তী পরিচর্যা ও ফলোআপের জন্য পরিবারের ভূমিকা অগ্রগন্য৷ পরিবারের সদস্যদের মাদক নির্ভরশীলতার চিকিৎসা সম্পর্কিত ধারনা, রুগীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষন ও সহায়তার জন্য পারিবারিক সভার মাধ্যমে আলোচনা করা হয়৷ রোগী ভর্তির ৪০ দিন পর থেকে পরিবারের সদস্যরা প্রতি শনিবার সেন্টারে  রুগীদের সাথে দেখা করতে পারবেন৷ রুগীর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে খোজ-খবর নেয়া যাবে৷ ব্যক্তিগত, দম্পতি ও পারিবারিক কাউন্সেলিং করা যায় যা রুগীর সাথে পরিবারের সুন্দর ও স্বাভাবিক অবস্থা তৈরিতে সাহায্য করে৷
   
০৯. বিনোদনের জন্য কি ব্যবস্থা রয়েছে ?
   
  মাদক নির্ভরশীলতা একটি মনোদৈহিক রোগ৷ শরীর ও মনের সুস্থতা ও বিকাশলাভের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ দাবা, লুডু ও ক্যারাম সহ বিভিন্ন ইনডোর গেইমস খেলতে পারে৷ সংবাদ পত্র, গল্পের বইপড়া, টিভি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং সপ্তাহে একদিন ভাল মানের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়৷ বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও আন্তজার্তিক দিবস উদযাপন ছাড়াও বার্ষিক পিকনিকের আয়োজন করা হয়৷
   
১০. পরবর্তী পরিচর্যা ও রিল্যান্সের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা রয়েছে ?
   
 
  পূর্ণমেয়াদ চিকিৎসার পর ফলোআপের ব্যবস্থা রয়েছে৷ পরবর্তী পরিচর্যার জন্য নারকোটিকস্ এনোনিমাস (এনএ) মিটিং রয়েছে৷ ফলোআপ করার সময় সপ্তাহে একদিন রুগীরা বাড়ী যেতে পারে৷ সেন্টারের সাথে যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য তাদের উৎসাহ দেয়া হয়৷
   
১১. রুগীদের জন্য আলাদা রুম বা কেবিন রয়েছে কি না ?
   
  রুগীর জন্য পৃথক রুম বা কেবিন নেই৷
   
১২. কতবার খাবার পরিবেশন করা হয় ?
   
  সাধারনভাবে সকালের নাস্তা, দুপুরেরর খাবার ও রাতের খাবার দেয়া হয়৷ এর সাথে সকালে ও বিকেলে চা-নাস্তা দেয়া হয়৷ রুগীদের পুষ্টিগত দিক লক্ষ্য রেখে উন্নতমানের খাবার দেয়া হয়৷
   
১৩. পরিবারের সদস্যরা কি রুগীর সাথে দেখা করতে পারে ?
   
  ভর্তিও প্রথম ৪০ দিন পর থেকে পরিবারের সদস্যরা প্রতি শনিবার রুগীর সাথে দেখা করতে পারবেন৷
   
১৪. চিকিৎসাকালীন সময়ে রুগীকে কি বাইরে নেয়া যাবে ?
   
  রুগীকে বাইরে নেয়ার কোন সুযোগ নেই৷ তবে জরুরী কোন বিষয়ে লিখিত অনুমতির মাধ্যমে শুধুমাত্র অভিভাবক নিতে পারবেন এবং নিদি©ষ্ট সময় পর পুনরায় সেন্টারে নিয়ে য়েতে হবে৷ রোগী সেন্টারের বাইরে নেয়ার পূর্বে সকল অর্থ পরিশোধ করতে হবে৷
   
১৫. পুনর্বাসনের জন্য কোন চাকুরির সুযোগ রয়েছে কি ?
   
  চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে রুগীর শারিরীক ও মানসিক, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকুরী করার মানসিকতার কথা বিবেচনা করে সুযোগ প্রদান করা হয়৷
   
১৬. বাইরে থেকে রুগীকে খাবার দেয়া যাবে কি না ?
   
  বাইরে থেকে কোন খাবার দেয়া যাবে না৷ তবে কোন উৎসব বা বিশেষ আয়োজনে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে সেন্টারের অবস্থানরত সবার জন্য খাবার দেয়া যাবে৷
   
১৭. কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য কি আলাদা খাবার দেয়া হয় ?
   
  কেউ অসুস্থ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ খাবার দেয়া হয়৷
   
১৮. রুগীর ফলোআপের সময় কতদিন ?
   
  সাধারনত সেন্টারে ১ মাস ফলোআপ করা হয়৷ কারো কারো জন্য এটা বেশীও হতে পারে৷
   
১৯. কি ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয় ?
   
  মাদক নির্ভরশীলতার চিকিৎসা একটি জটিল, দীর্ঘ মেয়াদী ও সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় মাদক নির্ভরশীলতা অনিরাময়যোগ্য রোগ৷ কিন্তু চিকিৎসার পরবর্তী পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে মাদকমুক্ত থাকা সম্ভব।রুগীকে প্রথম ১৪ দিন ডিটক্সিফিকেশন করার পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় নেয়া হয়৷ এখানে থেরাপিউটিক কমিউনিটি, নারকোটিকস্ এনোনিমাসের ১২ ধাপ ও মনোসামাজিক শিক্ষা এবং কাউন্সেলিং, মেডিটেশন ও গ্রুপ থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা চলে৷
   
২০. ধমীয় কি ব্যবস্থা রহিয়াছে ?
   
  পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য একজন ইমাম আছে৷যিনি আরবি শিক্ষা দিয়ে থাকেন।  এছাড়াও অন্যান ধর্মআবলম্বীদের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে৷
   
২১. ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে ভর্তি করা হয় ?
   
  অনেক রুগীর ভর্তির ইচ্ছা প্রাথমিকভাবে থাকে না৷ রুগীর অভিভাবক যদি রাজী থাকেন এবং ৪ মাস সেন্টারে রাখার জন্য মানসিক প্রস্তুত থাকে তাহলে ভর্তি করা হয়৷ এক্ষেত্রে রুগীকে সেন্টার পর্যন্ত অভিভাবকের দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে কারন রোগীকে সেন্টার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের নিজস্ব কোন ব্যবস্থা নেই৷
   
   
   
   
২২. চিকিৎসা কেন্দ্রটির অবস্থান ও ঠিকানা৷
   
  মিঠুর মোড়, লক্ষীপুর ভাটাপাড়া, রাজপাড়া, জিপিও-৬০০০, রাজশাহী । মোবাইল নং:০১৭১১৫৭৮৩০২, ০১৭১৫৬০৫০৮০।